জুলাই-আগস্ট গণহত্যার পক্ষে যেসব গণমাধ্যম ফ্যাসিস্ট সরকারের সঙ্গে কাজ করেছে, তাদের বিচার করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম।
আজ শনিবার সকাল ৯টায় ঢাকা থেকে রংপুরে যাওয়ার পথে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তাঁকে নীলফামারী জেলা ও সৈয়দপুর উপজেলা প্রশাসন এবং সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের পক্ষ থেকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানানো হয়। সৈয়দপুর জেলা বিএনপি ও অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরাও পৃথকভাবে উপদেষ্টাকে শুভেচ্ছা জানান।
ফ্যাসিস্ট সরকারের পক্ষে কাজ করা গণমাধ্যমের বিচারের বিষয়ে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যে কয়েকটি মামলা হয়েছে এবং কয়েকজন গ্রেপ্তারও হয়েছেন। আরও যাঁদের সম্পৃক্ততা আছে, তদন্ত সাপেক্ষে তাঁদেরও বিচারের আওতায় আনা হবে।
নাহিদ ইসলাম রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগদানের উদ্দেশে ঢাকা থেকে বাংলাদেশ বিমানে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন। এই সফরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন নাগরিক ঐক্য কমিটির সদস্যসচিব আকতার হোসেন।
এ সময় নীলফামারীর জেলা প্রশাসক নায়িরুজ্জামান, সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর-ই আলম সিদ্দিকী, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আমিনুল ইসলাম, সৈয়দপুর উপজেলা জামায়াতের আমির হাফেজ মাওলানা আবদুল মুনতাকিম তাঁকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।
এরপর সড়কপথে তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠান যোগ দিতে যান। ওই অনুষ্ঠানে তিনি প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তথ্য উপদেষ্টা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদ আবু সাঈদকে গভীরভাবে স্মরণ করে বলেন, ‘আবু সাঈদসহ এই জুলাই বিপ্লবের সব শহীদদের স্মরণ করছি। আবু সাঈদরা যে কারণে শহীদ হয়েছেন, গণ–অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্ক্ষা তাঁরা ধারণ করেছিলেন, সেই একই আকাঙ্ক্ষা ধারণ করে আমরা বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।’
তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সহযোদ্ধা শহীদ আবু সাঈদ এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন। তিনি লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন। তাঁর এই রক্তের বিনিমিয়ে আমরা স্বাধীনতা ভোগ করছি। এই সময়ে প্রতিনিধি হিসেবে আমরা সরকারের কাজ করছি।’
সম্প্রতি ভারত ধর্ম ও জুলাই বিপ্লব নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে, এ বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের অবশ্যই সত্যটা তুলে ধরতে হবে। যেটা সত্য, যেটা আসলে দেশে ঘটেছে, সেই জিনিসটাই যেন তুলে ধরতে পারি। দেশের মানুষের কাছে প্রচার করতে পারি, এতটুকুই আমাদের জন্য যথেষ্ট হবে।’
এ বিষয়ে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘ফেসবুকে নানা গুজব রটানো হচ্ছে, ফেক আইডি খুলে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য ছাড়ানো হচ্ছে। ফ্যাসিবাদী শক্তি রাজপথ থেকে পরাজিত হয়ে এখন অনলাইনে তারা তাদের শক্তি প্রদর্শন করছে। আমরা যাতে সচেতন হই, কোনো মিথ্যা তথ্য বা গুজব বিশ্বাস না করি।’
স্থানীয় সাংবাদিকেরা রংপুর অবহেলিত জেলা কেন, জানতে চাইলে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা অবশ্যই মনে করি, রংপুর অবহেলিত হয়ে আসছে। বাজেটগুলোতে রংপুরে অল্প পরিমাণ বাজেট দেওয়া হয়। তার দ্বিগুণ, তিন গুণ বাজেট দেওয়া হয় গোপালগেঞ্জে। এই যে বৈষম্য, এই বৈষম্যের বিরুদ্ধেই আমাদের লড়াই ছিল। আমাদের প্রধান উপদেষ্টা যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, আমরা অবশ্যই সে অনুযায়ী কাজ করছি। রংপুরের যে বৈষম্য অবহেলা, তা অবশ্যই আমরা দূর করব।’
তিস্তা মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের অন্তর্বর্তী সরকার কোনো নতজানু পররাষ্ট্রনীতিতে বিশ্বাস করে না। বাংলাদেশের যা ন্যায্য প্রাপ্তি, সেই ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে কাজ করা হচ্ছে।’
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যাগুলো প্রসঙ্গে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শহীদ হয়েছেন, সেখানে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা অবহেলিত থাকবেন না, তাঁদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. শওকাত আলী, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ তানজীমউদ্দিন খান, শহীদ আবু সাঈদের বাবা মো. মকবুল হোসেন, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন মোরশেদ হোসেন, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের ডিন মিজানুর রহমান, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন কমলেস চন্দ্র রায়, কলা অনুষদের ডিন শফিকুর রহমান, বিজনেস স্টাডিজের ডিন ফেরদৌস রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন