শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জর হত্যাকাণ্ড নিয়ে কানাডার সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কে ফের টানাপোড়েন দেখা দিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অটোয়ায় নিযুক্ত হাইকমিশনারকে প্রত্যাহার করছে নয়াদিল্লি।
নিজ্জর হত্যায় হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বার্মাসহ সেখানকার কয়েকজন জড়িত বলে কানাডা অভিযোগ তোলায় সোমবার (১৪ অক্টোবর) ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত নেয়। খবর এনডিটিভি।
এদিন সন্ধ্যায় দিল্লিতে কানাডিয়ান হাইকমিশনের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সকে তলব করে জানানো হয়, ভারতের কূটনীতিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কানাডার সরকারের প্রতিশ্রুতিতে নয়াদিল্লির ভরসা নেই।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে বলেছে, উগ্রপন্থা ও সহিংসতার পরিবেশে প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডোর সরকারের পদক্ষেপ তাদের (হাইকমিশনার সঞ্জয় কুমার বার্মাসহ কূটনীতিকদের) নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মুখে ফেলেছে। সেজন্য তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার বিষয়ে কানাডার সরকারের প্রতিশ্রুতির ওপর আমাদের ভরসা নেই। তাই, হাইকমিশনারসহ টার্গেট হওয়া অন্য কূটনীতিক ও কর্মকর্তাদের প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ’
কানাডার ব্রিটিশ কলাম্বিয়া প্রদেশে গত ১৮ জুন একটি শিখ মন্দিরের সামনে নিজের গাড়িতে শিখ নেতা হরদীপ সিং নিজ্জরকে (৪৫) গুলি করে হত্যা করা হয়। ভ্যানকুভারের ৩০ কিলোমিটার দূরের ওই মন্দিরের পাশে ব্যস্ত গাড়ি পার্কিং এলাকায় দুই মুখোশপরা লোক তাকে গুলি করে পালিয়ে যায়।
ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশে শিখ ধর্মাবলম্বীদের স্বাধীন ‘খালিস্তান’ রাষ্ট্র গঠনের যে তৎপরতা চলে আসছে, সেটার পক্ষে প্রকাশ্যে প্রচারণা চালাতেন নিজ্জর।
আলাদা রাষ্ট্র গঠনে শিখরা ১৯৭০-এর দশকে সশস্ত্র লড়াই শুরু করে, যার পরিণতিতে হাজারো প্রাণ ঝরে। নয়াদিল্লির অ্যাকশনের কারণে ভারতের মাটিতে এই তৎপরতা প্রশমিত হলেও কানাডা ও যুক্তরাজ্যের মতো দেশগুলোতে শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্রের পক্ষে প্রচারণা চলে আসছে। বিশেষ করে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গেছে।
শিখদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য প্রচারণা চালানো নিজ্জরকে ভারত ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে। তার অনুসারীদের অভিযোগ, হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়ার আগে নিজের কার্যক্রমের জন্য প্রাণনাশের হুমকি পেয়েছিলেন নিজ্জর।
ওই সময় এই হত্যাকাণ্ডের জন্য ভারত সরকারকে অভিযুক্ত করে জাস্টিন ট্রুডো বলেন, ‘কানাডিয়ান সরকারের সব গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতেই এই অভিযোগ তোলা হচ্ছে। ’ তখন ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উল্টো কানাডাকে অভিযুক্ত করে বলে, ‘ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি হুমকি খালিস্তানি সন্ত্রাসী ও উগ্রবাদীদের দীর্ঘদিন ধরে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে আসছে কানাডা। ’
পাল্টাপাল্টি সেই বাকযুদ্ধ একসময় প্রশমিত হয়ে আসে। তবে সম্প্রতি কানাডার একটি পদক্ষেপে দিল্লি-অটোয়া সম্পর্কে আবারও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।
রোববার (১৩ অক্টোবর) কানাডার কূটনৈতিক চ্যানেল থেকে বলা হয়, নিজ্জর হত্যাকাণ্ডে ভারতের হাইকমিশনার ও তার সহযোগী কয়েকজন কূটনীতিক ‘পারসন অব ইন্টারেস্ট’ (সন্দেহভাজন বা নজরদারিতে থাকা ব্যক্তি) হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন।
এর অর্থ হত্যাকাণ্ডের তদন্তে হাইকমিশনারকেও জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারে কানাডার সরকার।
বিষয়টি জেনে সোমবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কড়া প্রতিক্রিয়া জানায়। তাদের তরফ থেকে বলা হয়, এ ধরনের ‘উটকো অভিযোগ’ কঠোরভাবে প্রত্যাখ্যান করছে ভারত।
ভারত সরকার বলেছে, কানাডার এমন অভিযোগ ট্রুডোর ‘রাজনৈতিক এজেন্ডার’ অংশ। নির্দিষ্ট কোনো তথ্য ছাড়া যেকোনো পদক্ষেপের ব্যাপারেও অটোয়াকে সতর্ক করেছে দিল্লি।
মন্তব্য করুন