সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাসহ ৬ জনের নামে পূর্বাচলে ৬০ কাঠার প্লট বরাদ্দ কেন বাতিল করা হবে না সেই মর্মে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট।
একইসঙ্গে ২০০৯ সাল থেকে রাজউকের পক্ষ থেকে অবৈধ প্লট বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করতে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি মিফতাহ উদ্দিন চৌধূরীর নেতৃত্বে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
১২০ দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিবেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানান রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন।
বাকি দুই সদস্য হলেন, আইনজীবী জসিম উদ্দিন সরকার ও প্রকৌশলী আলমগীর হাসিন।
আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ মুজিবুর রহমান ও নূর মুহাম্মদ আজমী শুনানিতে ছিলেন।
রিটকারীদের আইনজীবী মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দীন বলেন, ২৬ হাজার প্লটের মধ্যে ৮৫৬টি আদালতে পর্যালোচনা করে দেখিয়েছি যে অনেকের নামে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যাদের শুধু ঠিকানা লেখা আছে অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা ও লন্ডনের ঠিকানা। অসংখ্য আইডিতে তথ্য নেই। শুধু দেওয়া আছে, যুবলীগ, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ। আদালত রুলসহ আদেশ দিয়েছেন। শেখ হাসিনা পরিবারের নামে ৬০ কাঠা প্লটসহ সকল অবৈধ প্লট বরাদ্দ কেন বাতিল করা হবে তা রুলে জানতে চেয়েছেন। বরাদ্দের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তাও জানতে চেয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে কমিটি করেছেন। এই কমিটির দায়িত্ব হচ্ছে ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত অবৈধ প্লট বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করবেন।
এর আগে সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবী আবেদনকারী হয়ে গত ১১ সেপ্টেম্বর ওই রিট করেন। রিট আবেদনকারী ১০ আইনজীবী হলেন মো. রেজাউল ইসলাম, আল রেজা মো. আমির, মো. গোলাম কিবরিয়া, মোহাম্মদ হারুন, মো. বেলায়েত হোসেন সোজা, কামরুল ইসলাম, হাসান মাহমুদ খান, শাহীনুর রহমান, মো. জিল্লুর রহমান ও ইসমাইল হোসেন।
রিটে এসব অবৈধ বরাদ্দের সঙ্গে জড়িত এবং সুবিধাভোগীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার আবেদন করা হয়েছে। এছাড়া এসব বরাদ্দের বিষয়ে তদন্ত করার জন্য হাইকোর্ট বিভাগের একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠনের নির্দেশনা চাওয়া হয়েছিলো।
রিট করার পর আইনজীবী জানিয়েছিলেন, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক আলোচিত পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে নিজের নামে প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্লট নিয়েছেন তার ছেলে সজীব আহমেদ ওয়াজেদ (জয়) ও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল। এছাড়া প্লট বরাদ্দ প্রাপ্তদের তালিকায় আছেন হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা ও তার দুই ছেলেমেয়ে। ২০২২ সালে তারা প্লট বুঝে পান। পরে বিষয়টি রাষ্ট্রীয় অতি গোপনীয় বিষয় হিসাবে চিহ্নিত করা হয়। ফলে হাতেগোনা কয়েকজন ছাড়া খোদ রাজউকেরই অনেকে এ বিষয়ে তেমন কিছুই জানেন না। শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের সদস্যরা প্রত্যেকে সর্বোচ্চ ১০ কাঠা আয়তনের প্লট নিয়েছেন। প্রস্তাবিত কূটনৈতিক জোনে সব প্লট একত্রে সন্নিবেশিত করার সুযোগ দেয় রাজউক।
রাজউকের আইন ও বিধি অমান্য করে ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে শুধু এই ৬ টি প্লট নয় এরকম অন্যান্য প্লটের বরাদ্দ চ্যালেঞ্জ করে এই রিট পিটিশন দায়ের করা হয়।
আবেদনে গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব, রাজউকের চেয়ারম্যান, পূর্বাচল প্রকল্প পরিচালক, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, রেজওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি এবং আজমিনা সিদ্দিক রুপান্তি-কে বিবাদী করা হয়েছে।
মন্তব্য করুন