মসজিদ কিংবা মন্দিরে রাজনীতির চর্চা কল্যাণ বয়ে আনে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতাদের উদ্দেশে বলেছেন, দয়া করে মন্দিরে বসে কেউ রাজনীতির চর্চা করবেন না।
আজ শুক্রবার বিকেলে মহাষ্টমীতে রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে এক শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এ অনুরোধ জানান।
বিএনপির এই নেতা বলেন, ধর্ম যেমন রয়েছে, যার যার রাজনীতিও তেমন আছে। তবে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে রাজনীতি নয়। মসজিদ-মন্দিরে রাজনীতির চর্চা মঙ্গল বয়ে আনে না। সুতরাং মসজিদ কিংবা মন্দির প্রাঙ্গণে রাজনীতির চর্চা কাম্য নয়।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ধর্ম একটা জীবনব্যবস্থা। এর মধ্য দিয়ে মানুষ মানুষকে ভালোবাসতে শেখে। জন্মসূত্রে কোনো মানুষ ছোট না, আবার বড়ও না। তিনি বলেন, ‘আমরা মানুষে মানুষে কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না। আমরা সবাই বাংলাদেশি। তারা যেমন বলে মেরা হিন্দুস্তান, আমরা বলি এটা আমাদের বাংলাদেশ। বাংলাদেশ আমাদের অর্জন, এটা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। একই সঙ্গে আমাদের সমস্যা আমাদেরই সমাধান করতে হবে, কোনো ভিনদেশি আমার-আপনার অধিকার আদায় করে দেবে না। ভারত আমাদের জন্য কিছু করবে না, করেও না।’
ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রসঙ্গ টেনে গয়েশ্বর রায় নিজ ধর্মের মানুষের মধ্যেও সম্প্রীতির অভাবের অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘মানুষ হিসেবে মানুষকে ভালোবাসতে হবে। সম্প্রদায়ের প্রতি সম্প্রদায়ের টান থাকতে হবে। আমাদের সম্প্রদায়ের নেতারা সেটা রাখেন না। আমি বিএনপি করি, এটা যেন মহাপাপ। এই পাপের কারণে এই মন্দিরের এক নেতা আমার নামে মামলা করেছে। না হয় মামলা করার কোনো কারণ নেই।’
গয়েশ্বর বলেন, ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা সরকারের ১৬ বছরে রাজপথে পুলিশ ও আওয়ামী লীগ ক্যাডাররা আমাকে হামলা করে রক্তাক্ত করেছে, আমার বাড়িতে হামলা হয়েছে, আমার পরিবারের সদস্যদের নানাভাবে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, কিন্তু দেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের এত সংগঠন, এসব সংগঠনের নেতারা নিন্দা বা প্রতিবাদ অথবা সহানুভূতি জানাননি। প্রকাশ্যে না হোক, গোপনেও করেননি। অপরাধ, আমি বিএনপি করি। এই মানসিকতা থেকে আগে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।’
‘মিডিয়া সত্য বলতে পারে না’
পরে সেখানে উপস্থিত গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন গয়েশ্বর চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, এখনো মিডিয়া সত্য কথা বলতে পারে না। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার আন্দোলন হয়েছে, তেমনটা এখনো লক্ষ করা যাচ্ছে না।
গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব’ মানুষের এই ভোটের অধিকারের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য আমরা দীর্ঘ সময় ধরে লড়াই-সংগ্রাম করছি। আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের বিদায়ের পর দেশে একটি অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত হয়েছে। জনগণের প্রত্যাশা, এই সরকার দ্রুততম সময়ে একটি অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে, যে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জনগণের প্রতিনিধির সমন্বয়ে একটি পার্লামেন্ট গঠিত হবে। যে আকাঙ্ক্ষা নিয়ে আমরা লড়াইটা করছি, সেই লড়াইয়ের সুফল প্রতিটি মানুষের দুয়ারে পৌঁছে দেবে নির্বাচিত সেই সরকার।’
শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে গয়েশ্বর রায় পূজামণ্ডপ পরিদর্শন করেন এবং আসা পুণ্যার্থীদের শুভেচ্ছা জানান। গয়েশ্বর রায় ঢাকেশ্বরী মন্দিরে পৌঁছালে বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত কুমার দেব, সাধারণ সম্পাদক তাপস চন্দ্র পালসহ নেতারা তাঁকে স্বাগত জানান। অনুষ্ঠানে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য সুব্রত চৌধুরী, মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি জয়ন্ত দেবসহ অন্য নেতারা বক্তব্য দেন।
মন্তব্য করুন